তেহরানের পরমাণু স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলায় ইরানের অভিজাত বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। এই হামলায় সালামিসহ আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নিহত হয়েছেন বলেও খবরে উল্লেখ করা হয়েছে।

আজ (শুক্রবার) ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, তেহরানে আইআরজিসির সদরদপ্তরেও হামলা হয়েছে।

নিহত হোসেইন সালামিকে ইরানের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার জন্ম ১৯৬০ সালে, ইরানের গোলপায়েগান শহরে।

কলেজে পড়াকালীন ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তিনি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীতে (আইআরজিসি) যোগ দেন।

বছরের পর বছর সামরিক বাহিনীতে কাজ করে তিনি ধাপে ধাপে পদোন্নতি পান এবং পরে ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্ব নেন। এই সময় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের জন্য তিনি দেশে-বিদেশে পরিচিতি লাভ করেন।

ইরানের পরমাণু ও সামরিক কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকার কারণে ২০০০-এর দশক থেকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিলেন তিনি।

এরপর ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তাকে আইআরজিসির নতুন কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে নিয়োগ দেন। তিনি তখন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জাফারির স্থলাভিষিক্ত হন।

সালামির নেতৃত্বেই ২০২৪ সালে ইরান প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিক হামলা চালায়। ওই হামলায় ৩০০টিরও বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়।

এরপর থেকেই ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা ক্রমশ চরমে পৌঁছায়। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সালামি বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতির জন্য ইরান সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’

ইসরায়েলকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, ‘শত্রুরা মনে করে যে, তারা যেমনভাবে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে লড়াই করে, তেমনভাবেই ইরানের সঙ্গেও পারবে। কিন্তু আমি বলে দিতে চাই, আমরা যুদ্ধক্লান্ত নই—বরং আমরা প্রস্তুত।’

তবে শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি এই নেতা।

খামেনির হুঁশিয়ারি

এদিকে, ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, এই অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে ‘কঠিন শাস্তি’ ভোগ করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রিয় দেশের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনে ইসরায়েল তাদের রক্তাক্ত ও দুষ্কর্মে রঞ্জিত হাত উন্মুক্ত করেছে। আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে তারা আরও একবার তাদের কুপ্রবৃত্তি ও দানবীয় স্বরূপ প্রকাশ করেছে।’